রাশিয়া থেকে প্রথম মালবাহী ট্রেন পৌঁছাল ইরানে
প্রতিক্ষণ ডেস্ক
রাশিয়া থেকে প্রথমবারের মতো মালবাহী ট্রেনে পণ্য এসে পৌঁছেছে ইরানের আপরিন স্থলবন্দরে। শনিবারের (৮ নভেম্বর) এই ঘটনাকে দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্কের নতুন অধ্যায় হিসেবে দেখা হচ্ছে। ভবিষ্যতে ইরান, রাশিয়া এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে নিয়মিত রেল যোগাযোগ স্থাপনের সম্ভাবনাও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। খবর— তেহরান টাইমস।
রাশিয়া থেকে দীর্ঘ ১২ দিনের পথ পাড়ি দিয়ে তেহরানের কাছাকাছি অবস্থিত আপরিন স্থলবন্দরে পৌঁছানো ট্রেনটি ৬২টি চল্লিশ ফুট কন্টেইনার বহন করে। এতে কাগজ পণ্য, কাগজের মণ্ডসহ বিভিন্ন সামগ্রী রয়েছে, যা ইরান ও ইরাকে সরবরাহ করা হবে। ট্রেনটি কাজাখস্তান ও তুর্কমেনিস্তান হয়ে ইনচেহ বরুন সীমান্ত দিয়ে ইরানে প্রবেশ করে। এটি ইন্টারন্যাশনাল নর্থ-সাউথ ট্রানজিট করিডোরের (আইএনএসটিসি) বাস্তবায়নে একটি বড় সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
রাশিয়া–ইরান রেল সংযোগের মাইলফলক
সোভিয়েত আমলেই ইরানের সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়নের রেল যোগাযোগ ছিল। কিন্তু ১৯৯০-এর দশকে নাগর্নো-কারাবাখ যুদ্ধের সময় সেই যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ২০০০ সাল থেকে তেহরান রাশিয়ার সঙ্গে রেল যোগাযোগ পুনরায় স্থাপনের উদ্যোগ নেয়।
২০০২ সালে রাশিয়া, ইরান ও ভারতের মধ্যে আইএনএসটিসি করিডোর নিয়ে চুক্তি হয়, পরে আজারবাইজান, আর্মেনিয়া, কাজাখস্তান, বেলারুশসহ আরও কয়েকটি দেশ এতে যুক্ত হয়। এই করিডোরের উদ্দেশ্য হলো জাহাজ, রেল ও স্থলপথে বাণিজ্যে সময় ও খরচ কমিয়ে আনা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি পুরোপুরি কার্যকর হলে সুয়েজ খালের ওপর নির্ভরশীলতা অনেকটাই কমে যাবে। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে থাকা রাশিয়া ও ইরানের জন্য এটি একটি বিকল্প ও লাভজনক বাণিজ্য পথ।
২০২২ সালে রাশিয়া এই করিডোর ব্যবহার করে প্রথমবারের মতো ভারতে পণ্য পাঠায়। এরপর এবার ট্রেনে পণ্য পাঠানো হলো ইরানে। চলতি বছরের মে মাসে ইরান, চীন, কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও তুরস্কের মধ্যে রেল যোগাযোগ উন্নয়নে নতুন চুক্তি হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আপরিন স্থলবন্দরে চীনের পাঠানো ট্রেনও আসে। যেখানে সমুদ্রপথে পণ্য পৌঁছাতে ৩০ দিন লাগত, সেখানে রেলপথে সময় লেগেছে মাত্র ১৫ দিন।
আপরিন স্থলবন্দর: নতুন বাণিজ্যকেন্দ্র
ইরান রেল কর্তৃপক্ষের বাণিজ্য ও পরিচালনা বিভাগের উপপ্রধান মোর্তেজা জাফরি জানান, জুন থেকে এখন পর্যন্ত ৩০টি মালগাড়ি আপরিন স্থলবন্দরে পণ্য এনেছে। ইরান চাইছে এই স্থলবন্দরকে সাবেক সোভিয়েত দেশগুলোর মধ্যে আমদানি-রপ্তানি ও ট্রানজিটের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে।
রাশিয়ান রেলওয়ে লজিস্টিকসের প্রধান নির্বাহী ওলেগ পোলিভ জানান, আগে মস্কো থেকে ইরানের বান্দার আব্বাস বন্দরে পৌঁছাতে সময় ও খরচ দুটোই বেশি লাগত। এখন ইরান, তুর্কমেনিস্তান ও কাজাখস্তানের সহযোগিতায় সময় কমে হয়েছে মাত্র ১৫ দিন। তিনি বলেন, “বড় করিডোরগুলোর সংযোগস্থলে অবস্থান করায় আপরিন স্থলবন্দরের সম্ভাবনা এখন অনেক বেশি।”
বাড়ছে রাশিয়া–ইরান বাণিজ্য
নভেম্বরের শুরুতে ইরান ও রাশিয়া যৌথভাবে একটি ট্রান্সপোর্ট টাস্ক ফোর্স গঠনের চুক্তি করে। এই চুক্তির অংশ হিসেবে দুই দেশ বাণিজ্য সহজীকরণের লক্ষ্যে একটি ডিজিটাল সিঙ্গেল উইন্ডো সিস্টেম চালুর সিদ্ধান্ত নেয়।
ইরানের পোর্টস অ্যান্ড মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের লজিস্টিকস বিভাগের প্রধান মেহদী আসাদি জানান, এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো কাস্টমস প্রক্রিয়া সহজ করা, বাণিজ্যে স্বচ্ছতা আনা এবং পণ্য পরিবহন দ্রুততর করা।
তিনি আরও বলেন, “দুই দেশের কর্মকর্তারা কাস্পিয়ান সাগরপথের সমস্যা, আইএনএসটিসি-র পূর্ব শাখার প্রতিবন্ধকতা এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের বিভিন্ন অসঙ্গতি সমাধানে নিয়মিত আলোচনা করছেন।”
ইরান ও রাশিয়া উভয়ই জানিয়ে দিয়েছে, বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূর করে পারস্পরিক বাণিজ্য ও যোগাযোগ আরও জোরদার করতেই তাদের এই উদ্যোগ।










